ভূমিকা
ইসলাম যৌনতাকে একটি স্বাভাবিক ও বৈধ মানবিক চাহিদা হিসেবে স্বীকার করে; তবে ইসলাম বলে না যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যৌন আকর্ষণ থাকবেই কিংবা তা প্রকাশ করাটাই জীবনের অপরিহার্য অংশ। ইসলামের মূল নীতিতে আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা ও অপরের অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—যৌন আচরণের জন্য কোনো একক, বাধ্যতামূলক ছাঁচে মানুষকে ফেলে বিচার নয়।
এই প্রেক্ষাপটে, অযৌনচিত্ত—অন্যদের প্রতি যৌন আকর্ষণের অনুপস্থিতি—ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী নয় বরং তার মধ্যে স্থান পাওয়ার মতো একটি বৈধ ও মানবিক অভিজ্ঞতা। তবুও মুসলিম সমাজসহ অনেক সমাজেই অযৌনতা আজও ভুল বোঝাবুঝি, অজ্ঞতা কিংবা একেবারে অদৃশ্যতার শিকার। ফলে এমন এক বাস্তবতায় আমরা দাঁড়াই, যেখানে বিবাহ, যৌনতা ও সন্তান জন্মদানকে জীবনের মূল লক্ষ্য ভাবা হয়, অথচ যারা এসব আকর্ষণ অনুভব করেন না—তাদের জায়গা কোথায়?
তাই , এই আলোচনায় আমরা দেখব, ইসলামি শরিয়াহ ও সুফিবাদের আলোকে কীভাবে অযৌনচিত্তকে নতুনভাবে ভাবা যায়।
বাধ্যতামূলক যৌনতা: প্রচলিত ইসলামি চর্চা
১. নারী–পুরুষ আলাদা রাখার অনুশাসন
ধর্মীয় পরিবেশে নারী-পুরুষের মেলামেশা সীমিত রাখা হয়, যৌন প্রলোভন এড়ানোর জন্য। এ-ই যুক্তি দিয়ে অনেকেই বলেন, যৌনতা একটি স্বাভাবিক ও অপরিহার্য চাহিদা।
২. অল্প বয়সে বিবাহের উৎসাহ
ইসলাম ছোটবেলায় বিয়েকে নিরুৎসাহিত করে না। বরং যদি কেউ ‘ফিতনা’ বা অবৈধ আকাঙ্ক্ষায় পড়ে, তবে তাকে দ্রুত বিবাহের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩. সেলিবেসি (বৈবাহিক সংযম) নিরুৎসাহিত
হাদিস:
উসমান ইবনে মাজউন (রা.) সেলিবেসি পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, রাসুল (সা.) তা প্রত্যাখ্যান করেন।
“আর যদি তিনি (রাসুলুল্লাহ) আমাকে অনুমতি দিতেন, তবে আমরা নিজেদের ‘খোজা’ করে ফেলতাম।”
— সহিহ মুসলিম, কিতাব আল-নিকাহ, হাদিস ৩২৩৭
৪. দাম্পত্য জীবনে যৌনতা: একটি মৌলিক দায়িত্ব
হাদিস:
“যখন কোনো নারী তার স্বামীর শয্যা ত্যাগ করে রাত্রিযাপন করে, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিসম্পাত করে।”
— সহিহ মুসলিম, কিতাব আল-নিকাহ, হাদিস ৩৩৬৬
বাধ্যতামূলক যৌনতার বাইরে চিন্তা: সুফি ঐতিহ্য ও আধুনিক ফতোয়া
সুফি দৃষ্টিভঙ্গি
আবু তালিব আল–মাক্কি (৯৯৬ খ্রি.) তাঁর বই কুত আল কুলুব-এ লেখেন:
“আল্লাহ বিবাহ বা সেলিবেসি নির্ধারণ করেননি। তিনি নির্ধারণ করেছেন হৃদয়ের সততা, আত্মার প্রশান্তি, ও দায়িত্ব পালন।
কেউ যদি বিবাহ ছাড়া তা অর্জন করতে পারেন, তাহলে সেলিবেসিতে কোনো ক্ষতি নেই।”
— উৎস: Carl Olson, Celibacy and Religious Traditions, Oxford University Press, ২০০৭
আধুনিক ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি: ফতোয়া (২০১৭)
ড. হাতেম আল–হাজ (মিশকাহ ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন) ২০১৭ সালে অ্যাসেক্সুয়াল ব্যক্তিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ফতোয়া দেন:
- যৌন আকাঙ্ক্ষার অভাব কোনো গুনাহ নয়
- অবৈধ যৌনতায় পড়ার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে করা ফরজ নয়
- যৌন ইচ্ছা না থাকলে বিয়ের আগে সঙ্গীকে জানানো জরুরি
🔗 উৎস: “How Islam Views Asexuality”, About Islam, ৬ এপ্রিল, ২০১৭
মুসলিম ইতিহাসে অযৌন মনোভাবের সম্ভাব্য চিহ্ন
ইতিহাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু নারী:
- যৌনতায় অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন
- তাঁদের স্বামীদের একাধিক স্ত্রী ছিল
- কেউ কেউ আজীবন সেলিবেট জীবন বেছে নিয়েছিলেন
🔗 লরা (৮ জুলাই, ২০১৫): “Potentially Asexual Women in Early Muslim History”
একটি বিশেষ উদাহরণ:
রাবেয়া বাসরী — বিখ্যাত সুফি নারী, যিনি কখনো বিয়ে করেননি এবং আত্মিক সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
🔗 “Was Rabi’a Basri A Feminist?”
উপসংহার
ইসলামের আলোকে ধর্মগ্রন্থ বা নির্দেশিকাগুলো ‘অযৌনচিত্ত’ – এর প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ না করলেও আচরণ ও নৈতিকতা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কেউ যদি নিজেকে অযৌনচিত্ত বলে চিহ্নিত করেন এবং কারও প্রতি অবিচার না করে, নিজ জীবনে সততা ও মূল্যবোধ অনুসরণ করেন—তাহলে তার অবস্থান ইসলামী শরিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ নয়। ফলে, আমাদের কাছে মনে হয়, ইসলাম বিবাহকে উৎসাহিত করলেও একে বাধ্যতামূলক করে না; ফলে অযৌনচিত্ত কেউ চাইলে মানসিক সহচর্যের ভিত্তিতে বিয়ে করতে পারেন, অথবা স্বেচ্ছায় অবিবাহিত থেকে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি খুঁজে নিতে পারেন—উভয় পথই নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা।
এই আলোচনা আমাদের আহ্বান জানায় অযৌনতাকে বিচ্যুতি নয়, বরং এক ধরনের বৈধ ও স্বতন্ত্র মানবিক বৈচিত্র্য হিসেবে দেখার—যা শরিয়তের মূল দর্শন, ইসলামী আধ্যাত্মিকতা এবং বিশেষত সুফি তরিকার গভীর আত্মজিজ্ঞাসার অনুরণনের সঙ্গে মেলে। শরীরের আকর্ষণের গণ্ডি ছাড়িয়ে আত্মিক পরিপূর্ণতাই এখানে প্রধান—যেখানে অযৌনচিত্ত ব্যক্তিরাও নিজেদের জন্য জায়গা খুঁজে পেতে পারেন।
অতিরিক্ত উৎসসমূহ:
আবু আমিনা ইলিয়াস (২৪ এপ্রিল, ২০১৮): “Sexual consent, marriage, and concubines in Islam” — Faith in Allah blog
🔗 https://www.abuaminaelias.com/consent-marriage-concubines/
লরা (৩০ মে, ২০১৪): “Towards an Ace-Positive Framework for Marriage in Islam” — Asexuality and Islam
🔗 https://www.asexualityandislam.com/2014/05/towards-an-ace-positive-framework-for-marriage-in-islam.html
লরা (৮ জুলাই, ২০১৫): “Potentially Asexual Women in Early Muslim History”
🔗 https://www.asexualityandislam.com/2015/07/potentially-asexual-women-in-early-muslim-history.html
লালেহ বখতিয়ার, শায়খ হিশাম কাব্বানি: Encyclopedia of Muhammad’s Women Companions and the Traditions They Related
আবু আবদুর রহমান আস-সুলামি, অনুবাদ: রকিয়া ই. করনেল: Early Sufi Women
নাবিলা জামিল (১০ অক্টোবর, ২০১৮): “Was Rabi’a Basri – The Single Most Influential Sufi Woman – A Feminist?”
🔗 https://feminisminindia.com/2018/10/10/rabia-basri-sufi-woman-feminist/
Your content is top-notch! I appreciate the effort you put into making it so informative.
Thank you! I\’m thrilled that you found the post valuable. Your support means a lot.
I\’m glad you enjoyed it! Your kind words inspire me to keep creating informative content.