A New Definition of Phobia
আপনার বোল্ড কথাবার্তা আমার খুবই ভালো লেগেছে।
আমি আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী।
আমার ভার্জিন মেয়ে খুব পছন্দ, আপনারা তো ভার্জিন,
আমাকে বিয়ে করেন।
এই যে আমার ***** এর ছবি, আপনার আকর্ষণ তৈরি হবে
“তোদের জায়গা এই দেশে নাই। তোদের শেষ করে দিবো!”
“তোর উপর খোদার গজব পড়বে। দেখে নিস!!”
অযাচিত সব মেসেজে বিরক্ত হয়ে, ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো রেবা। এত অসহ্য মানুষ কি ভাবে হতে পারে।
কদিন আগেই নিজে এসেক্সুয়াল তা আত্মপ্রকাশ করেছে সে। যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছিলো ঐ পোস্টের কমেন্ট গুলো একবার দেখে আর ইচ্ছে হয় নি দেখার।
“আবার যদি একাধিক বিয়েকে সমর্থন করি, তাও আপনাগো চুলকায়।একজন নারীর হেফাজতের জন্য তাকে অবশ্যই সারাজীবন একজন পুরুষের ছায়ায় থাকতে হবে,তাই সে যেমনই হোক বিয়েটা Compulsory”
“আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা এন্ডোক্রাইনোলজিকেল/হরমোনাল ডিসঅর্ডার যা চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান
সম্ভব। সমাধানের কথা না বলে প্লাটফর্ম বানানো নিয়ে অস্থির।”
“আমারতো মনে হয় এইটা সমকামীদের একটা নতুন কৌশল।।। এভাবে তারা নতুন নতুন কমিউনিটি বানিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জন করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারবে।।।”
“ভালো তো, আমরা ৪র্থ লিঙ্গের ব্যক্তিদের সাথে পরিচিতি লাভ করলাম।।”
এই রকম সব কমেন্টের ছড়াছড়ি।
অন্য সব কিছু তো আছেই, সাথে এসে উটকো ঝামেলা হিসেবে উপস্থিত হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজ রিকুয়েষ্ট অপশন। মানুষ গালাগালি দিচ্ছে, কেউ কেউ তার বিশেষ অঙ্গের ছবি পাঠাচ্ছে, কেউ কেউ ফতোয়া দিচ্ছে। সোশ্যাল সাইটে তাদের একটা হেল্পলাইন নম্বর ছিলো যেন কোন অসহায় অযৌনচিত্ত ব্যক্তিরা যোগাযোগ করতে পারে, কাল থেকে সেখানেও একজন ফোন করে হুমকি দিচ্ছে। রেবা এতদিন মেসেজ গুলোকে পাত্তা দিতো না৷ কিন্তু ইদানীং এগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছে। ফোনে পর্যন্ত রেহাই দিচ্ছে না। যদি বাসায় এসে উঠে?
কি করবে তখন। বাসায় অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা। উনারা নিজেরা এমনিতে তেমন কিছু না বললেও তার সিদ্ধান্তে যে উনারা খুশী হন নি সেটা বুঝা যাচ্ছে।
রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রেবা। কালকে আবারও বড় একটা দিন। সকালে উঠে, ফোন খুলতেই অবাক। মেসেজে
নোটিফিকেশন আসে কেউ একজন ১০ বার কল করেছিলো। কলব্যাকে লাভ হয় না। কেউ কল রিসিভ করে না।
ফ্রেশ হতে সে ওয়াশরুমে চলে যায়। এসে দেখে, একটা অচেনা আইডি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ আসে।
আর কতদিন, তোমরা লুকিয়ে থাকবা, তোমাদের পাইসি! তোমরা আসলে সমকামী, এসব চালাকী করে লাভ হবে
না, সবগুলারে উপরের ঘরে পাঠামু।
মেসেজটা দেখে শীতল রক্তস্রোত বয়ে যায় রেবার। কে সে? কি অপরাধই বা তার??
তৎক্ষনাৎ তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু এসপি মতিনকে ফোন করে। ওপাশ থেকে কেউ ফোন কেটে দেয়।
যান্ত্রিক কণ্ঠে অপারেটর থেকে বলতে থাকে, আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত
আছে…পুরোটা শোনার ধৈর্য্য হয় না রেবার। মতিন কেন ফোন কেটে দিলো?
এতদিন অনেক বিষয়ে সাহায্য করেছে। বিশেষ না ভেবে৷ আরো কয়েকবার কল করলো কিন্তু একই একঘেয়ে উত্তর।
তাহলে কি সে ব্লক লিস্টে ফেলে দিয়েছে তাকে?
এবার, সে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো তার এলাকার থানায়। থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা তাকে দেখে খুশি হলেন না।
বিরসমুখে বসতে বলে কাষ্ঠ গলায় বললন, বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
রেবা সবটা খুলে বললো। কিন্তু ব্যক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখলো না।
আপা! বাংলাদেশের সংবিধানে এসেক্সুয়াল নাগরিকরে নিয়া কোন আলাপ নাই। আপনাদের পক্ষে তো অনেক এম্বাসী আছে। আপনারা আমার মতো ছোটখাটো পুলিশের কাছে এসেছেন কেন? পৃথিবীর বড় বড় এনজিও আপনাদের ফ্ল্যাগের ছবি দেয়, কত বড় বিদেশী কোম্পানীর স্পন্সর পাইবেন। জাতিসংঘও আপনাদের সাথে৷ যান,
বিদেশে চইলা যান, এইটা তো খুব ভালো সুযোগ।
আমরা কি করবো আপনার জন্য?
রেবা অবাক হয়ে যায়। কি বলছে এই পুলিশ।
এতটা অবহেলা। পাশে থেকে ফিসফিসানি ভেসে আসে।
এই মহিলা তো গে লেসবিয়ানগো লেইগা কাম করে।
হ, রে৷ দেখ, কি পোশাক আষাক পড়সে আরে, বেডি হইলো। শাহবাগী। এই বেডিরে তো আমরা হেল্প করতাম না।
রেবা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ভাবে৷ যা করার তাকে জোর করিয়েই করাতে হবে। শক্তের ভক্ত নরমের যম। তিনি কড়া গলায় বলেন।
দেখুন, ইনস্পেকটর। আপনার কাছে সমস্যা নিয়ে আসছি। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন। আপনাকে এখানে হুদাই বসায় রাখে নাই কেউ। সো, একটু হেল্পফুল হোন। আমার আপনার উভয়েরই মঙ্গল।
এতগুলো কথা কিছুই যেন ইন্সপেক্টরের কর্ণগহ্বরে প্রবেশ করলো না। তিনি নির্লিপ্ত ভাবে লিখলেন। এবং প্রয়োজনীয় কাজ দায়সারাভাবে সারলেন।
বিশেষ এক মহল তার পিছনে লেগেছে বেশ ভালো ভাবেই। তার এগিয়ে আসার গল্প তার নিরীহ বন্ধুূ্দের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তাঁর মাধ্যমে, তাঁর বন্ধুদের খুঁজে বের করে করে সবাইকে রেপ/ডেথ থ্রেট দেওয়া হচ্ছে।
পুরো দেশ জুড়ে, এটি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হতে থাকে। পক্ষ ও বিপক্ষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কিছু ব্যক্তি একে ধর্মের সাথে জুড়ে দিয়ে একে অন্যায় বলে, কেউ বা বলছে এসব ভন্ডামি৷ ইন্টারভিউ এরপর বেশ কয়েকটি নিউজ চ্যানেল উনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। এমন নয় যে তারা, এসেক্সুয়ালদের নিয়ে কাজ করতে চায়। তারা আসলে চায় তাদের নিজেদের চ্যানেল নিয়ে সবাই যেন মাতামাতি করে। তাদের চ্যানেলের রিচ বাড়ে। আসলে, সুযোগের সদ্ব্যবহার সবাই করতে চায় কিন্তু সময়ে পাশে থাকার সময় কাউকে পাওয়া যায় না।
তার বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে যেন। সবার কাছে তিনি শাহবাগী ট্যাগ পেয়েছেন, তাঁকে ডেথ থ্রেট দেওয়া হয়েছে৷ একা এত কিছু কি করে হ্যান্ডেল করবেন? তাঁর আশেপাশে যত বন্ধু ছিলো প্রায় সবাই ই যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে। কয়েকজন তো এগুলা থেকে সরে যাওয়ার কথা বলছে।
এরইমধ্যে খবর আসে৷ তার কাছে বন্ধু রহিমকে কেউ মেরে ফেলেছে….
এ খবর সাথে অন্যগুলো৷ রেবার মাথায় মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। তিনি, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে একঘরে হয়ে পড়েন।
রেবার অবস্থা এত খারাপ হয় যে, সে কাউন্সিলিং এযায়।। কাউন্সিলিং এ গিয়েও আরো সমস্যা। সাইকো থেরাপিষ্টও তাকে দোষারোপ করতে থাকে , তাকে “সঠিক পথে” ফিরানোর চেষ্টা করতে থাকে।
সহানুভূতি দেখানোর চেয়ে “গরু পিটিয়ে সোজা করতে হয়” এমন মনোভাব তাদের মধ্যে।
গভীর রাতে, রেবা নিজের রুমের বিছানায় বসে কাঁদতে থাকে। নিজেকে এমন অসহায় আগে কখনো লাগে নি তার..