
কাজলের সরি বলার পর শাহরুখের এক ডায়ালগ সবাইকে মাত করে দিলো, ”বড় বড় শহরে এ রকম ছোট ছোট ঘটনা ঘটতেই থাকে।”
ছেলেবেলায় এই মুভি বেশ ভালো লাগতো। কেন যেন, মনে হতো, শাহরুখের মতো তার জীবনেও এরকম নায়ক আসবে৷ সায়মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে৷ সবকিছু বদলে যেতে শুরু হয়, তার সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা দেওয়ার পর থেকে। সবার ই তখন বিভিন্ন ছেলেদের নিয়ে কানাঘুষা চলে। কাকে কে প্রেমপত্র দিলো৷ কোন মেয়ে কোন ছেলের সাথে ঘুরতে গিয়েছে এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা৷
কিন্তু সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ক্লাস ৮ এ পড়ুয়া সায়মার। সে আপন মনে লিখে চলেছে, বৃত্তের উপপাদ্য। এই এক গণিত বিষয় তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে৷ গত পরীক্ষায় এই বিষয়ে খুবই কম নাম্বার পেয়েছিলো তার বাবা মা হুমকি দিয়ে রেখেছে। পড়াশোনা ভালো না করে করলে বিয়ে দিয়ে দিবে। এবার বৃত্তি পেতেই হবে। পড়াশোনা ভালো হলেই কি বিয়ে আসা বন্ধ হবে? অন্যদের তুলনায় সে একটু বেশি স্বাস্থ্যবান৷ দেখতেও বড় বড় লাগে৷ তাই, বিয়ের সমন্ধ আসতেই থাকে। লোভনীয় পাত্র কাউকে পেলেই বাবা মা উঠেপড়ে লাগে। বিয়ে করতেই হবে৷ এই পড়ালেখার মনোযোগটা ধরে রেখেই সে টিকে আছে, নয়তো কবেই বিয়ে দিয়ে দিতো।
পরিবার কেবলই বাহানা খুঁজতে থাকে।
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে সায়মা, কম্বাইন্ড ক্লাসরুম, সাথে সিনিয়র তো আছেই। প্রায় সবার মধ্যেই প্রেম প্রেম ভাব। সিনিয়র বা ব্যাচমেট কে নিয়ে কানাঘুষা চলছে। যথারীতি কলেজেও ক্লাসে গুঞ্জন উঠে, কোন ছেলের চেহারা সুন্দর, কোন ছেলে খুব সুন্দর করে কথা বলে কিংবা কোন ছেলে বেশিই পরিপাটি এসব নিয়ে মেয়েদের মধ্যে অনেক আলোচনা। ঐসবেও তার কোনো খেয়াল নেই৷ ভাবতেই ভয় লাগতে তার। যদি আবার বিয়ে দেয়ার জন্য পরিবার পাগল হয়৷ মাধ্যমিকের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় আপাতত পরিবার কিছু বলছে না। কিন্তু জানে এমন অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।
বান্ধবী রিতা তার স্কুল জীবনের ফ্রেন্ড, কলেজেও একই বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো এখন একটা ব্যাংকে জব করে, সুখী সংসার। একটা মেয়েও আছে ছোট।। এসে বলতো , “স্কুলে তো অনেক পড়লি, কলেজে উঠেছিস৷ এবার তো একটু চারপাশে তাকা। প্রেম পিরিতি কর কিছু। এখন না করলে কখন?”
সায়মা বলতো,” না রে আমার ওসব ভালো লাগে না।”
রিতা বলতো,” ওমম!! মুখে বলছো এসব, ঠিকই তো মনের ভিতরে কাউকে স্থান দিয়ে রেখেছো। বুঝি না মনে করেছো।”
সায়মা বিব্রতবোধ করতো। আসলেই তো!সেই ছোট বেলার শাহরুখের মতো নায়ক বড় হয়ে কর্পূরের মতো উবে গেলো কি করে?
কলেজের জীবন দেখতে দেখতে কেটে যায়। কয়েকবার ছেলেদের সামনে বসতে হয়েছে থাকে। কাউকে ভালো লাগে নি। কাউকে বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে। পরিবারের বড় মেয়ের এই অবস্থা দেখে শঙ্কিত হয়ে উঠেন বাবা মা। সে কি কারো সাথে প্রেম করছে? নাকি, ওর কোনো সমস্যা আছে? এডমিশন সামনে তাই জোর করেন না কিছু। কিন্তু, ভার্সিটিতে উঠার সাথে সাথে বিয়ে দিবেন বলে সংকল্প করেন।
বেশ ভালো একটি ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগও হয়েছিলো। অনেক স্বপ্ন ছিলো একটা ক্যারিয়ার গড়বে। বড় কিছু হয়ে দেখিয়ে দিবে যে বিয়ে ছাড়াও মেয়েদের অনেক কিছু করার আছে। বিয়েই মেয়েদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নয়। বাবা অনেকদিন পর্যন্ত চুপ ছিলো।
কিন্তু ভার্সিটি শেষের পর চাকরিতে ঢুকার পর খুবই চাপ দিতে শুরু করেন। মা তো আগে থেকেই চেঁচামেচি চালিয়ে যাচ্ছিলো…
সাথে যুক্ত হয়, প্রতিবেশী আর আত্মীয় স্বজনদের প্যারা। প্রতিনিয়ত, প্রতিবেশীরা এসে একটি বিষয় নিয়েই কথা বলতে থাকে। “ভাবী, আপনার মেয়ের বিয়ে কি দিবেন না?”
মা জবাবে কেঁদে উঠেন। আর কিছু বলেন না। মাঝেমধ্যে সায়মার সামনে পড়ে গেলে, সায়মা আর কথা বাড়ায় না। নিজের রুমের দিকে হেঁটে যেতে থাকে….
“Life isn’t about waiting for the storm to pass; it’s about learning to dance in the rain and finding joy in the midst of life’s challenges.”
Vivian Greene
আর যেকোনো আত্মীয় স্বজন আসলে এটি ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নেই যেন৷ না না ধরণের পাত্র এনে হাজির করতে থাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিছুতেই সায়মা টলে যায় নি। বয়স থেমে থাকে না। বয়স লাফিয়ে ২৮ ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়৷ বাবা জোর করতে থাকেন। বিয়ের তোড়জোড় চলতে থাকে। সায়মা নিজের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে, সে একা নয় এমন আরো অনেকেই আছে তারমতো, যারা কারো সাথেই রোমান্টিক বা সেক্সুয়াল রিলেশনে যেতে চায় না। এটা কোনো রোগ নয় এভাবেই তারা পৃথিবীতে এসেছে। তাদের এরোমান্টিক এসেক্সুয়াল বলা হয়। কিন্তু, কাকে বুঝাবে এগুলো। আরো কয়েকটা পাত্র বাতিল করার পর, ওকে সত্যি সত্যি ই কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এই কবিরাজের কাছে গিয়ে নাকি সন্তানহীন দম্পতিও সন্তান লাভ করেছে। কবিরাজের ভণ্ডামিতে সে অবাক হয়ে যায়। কি কি সব খেতে বলে শিলাজিৎ, মুলতানি মাটি, জাফরান আরো কত কি শিকড় বাকড় মিশিয়ে তাকে অখাদ্য খাওয়ানো হয়৷ এরফলে কেবল পেট খারাপে কষ্ট ই পেয়েছে। উপকার কিছু হয় নি। কার থেকে যেন ফ্যামিলি শুনেছে, এই বয়সে জ্বিন, মেয়েদের কবচ করে নিজের স্ত্রী বানিয়ে ফেলে, তাই মরদের প্রতি আগ্রহ চলে যায়। জ্বিন তাড়ানোর জন্য হুজুরের নিকট যেয়ে পানিপড়া খেয়েছে তাবিজ নিয়েছে।
এগুলোতেও কাজ হয় নি। বাবা রেগে উঠেন, দাবি করেন জোর করে বিয়ে দিবেন। যার সাথে বিয়ে দিবেন তাকেই বিয়ে করতে হবে। কিন্তু বিয়ে সে করবে না, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। তাই বাসা থেকে বের হয়ে যাবে চিন্তা করে । এই শহরে থাকার জায়গার অভাব হবে না। এরকম চিন্তা ওর মনে৷ কিন্তু আসলে কি তাই? হন্য হয়ে বাসা খুঁজতে থাকে। কিন্তু পায় না তো৷ এই শহরে, টাকা পয়সা থাকলেও, একা বাড়িতে একটি মেয়ে থাকবে এটি বাড়িওয়ালারা ভালো চোখে দেখছেন না। সবাই না করে দিতে থাকে। ইতোমধ্যে, প্রায় ২০ এর উপরে বাসায় খোঁজ নিয়েছে। কয়েকটি এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু, লাভ হয় নাই।৷ খোঁজাখুঁজি শেষ করে হতাশ হয়ে রুমে এসে ভাবতে থাকে।
তার কি বিয়েই করে ফেলা উচিৎ?
বিয়ে না করে করবেই বা কি?
বাইরের জগৎ কি তার জন্য সেইফ? আর সেইফের চেয়ে বড় কথা, একা তো থাকাই সম্ভব না!!
বাইরের দুনিয়ায় গেলে রেইপের শিকার আবার বিয়ে করলে ম্যারিটাল রেইপের শিকার।
সে হতাশ হয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে কি সিলিং ই তার শেষ ভরসা??
Your dedication to providing quality content is truly admirable. I\’m a fan of your work.
Thank you for your kind words. I\’m delighted that you found the post enlightening.
I\’m impressed by your writing style and the depth of your knowledge on this topic.
I\’m so glad I found your site. Your posts are consistently excellent.