মূল গল্প: দীপা মাহবুবা ইয়াসমিন
অনুলিখন : রাসেল রানা
দৃশ্য ১.
(মায়ের কন্ঠস্বর শোনা যায়)
মা্ইয়া বা পোলা চাইলেই হওয়ন যায় না, হইয়াই জন্ম হ্ইতে হয়। হুদা শইল সাস্থ্যে বেডা অইলেই কি অয়? কথা বারতায়/ কাম কাইজেও বেটা অওয়া লাগে। বেডা অইয়া বেডিগোর মতো সাজলে লোকে কয় হিজড়া।
কাজল ফেলে দিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকি আমি। নির্বাক, পলকহীন। যেন ধরাধামে কোন শব্দ নাই।
দৃশ্য ২.
হলুদ বাঁটা মাখা সারাশরীর, সাদা লুঙ্গী পরা। আড়চোখে দেখে ছেলেরা হাসে। উচ্চহাস্যে কেউ কেউ বলছিল-
`হিজড়ার আবার খৎনা !‘
তখন আমার বয়স ছিল সবে এগারো বছর। (সংলাপ)
দৃশ্য ৩.
মাঝে মাঝেই আয়নায় তাকিয়ে ভাবতাম, অর্ধনারীশ্বরের কথা। নাচের স্কুলের দেখা সেই পিতলের বৃত্তাকার ফ্রেমে নৃত্যরতা কোন এক দেবতা। যখনই চোখ পড়ত থমকে যেতাম। প্রণাম করতে ইচ্ছে হতো। পরক্ষণেই মনে পরতো, আমি তো মুসলমান। এ ঘরে প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ।
মায়ের কন্ঠ শোনা যায়, “ইতা তো শয়তানের কাম। ইতা করলে মুরতাদ অয়া যাবি”।
দৃশ্য ৪.
(নটরাজের সাথে আলাপ,সংলাপে)
তুমি কি সত্য? সত্য কি কেবল নারী আর পুরুষ? তবে তুমি কে? অর্ধেক নারী অর্ধেক নর নাকি অর্ধেক ঈশ্বর?
তাহলে কে আমি? অর্ধেক মানবী অর্ধেক মানব?
যৌবনে ভাবতাম পুরুষ হবো। হবো কেন আমি তো তাই।
কিন্তু মহাসত্য কি? আমি কে? না নারী না পুরুষ?
সে কোন উত্তর দেয় না।
দৃশ্য ৫.
চলতি পথে কোমড় জড়িয়ে ধরেছে পাড়ার কত ছেলেরা। লুকিয়ে চিঠি লিখেছে। টেনে নিয়ে যেতে চাইতো অন্ধকারে। কেউ কেউ গলা টিপে ধরে বলে, কাউরে কিছু কইবানা সোনা, তুমি ছুড়ু মানুষ তো। আদর করি।
যে সমবয়সীরা একজন টেনে টেনে বলে-আমার ঘরে এমন পোলা হলি পরে গলা টিপা মারি ফালাবনে। রাতের অন্ধারে তারও রুপ পাল্টে যায়। হাত টেনে নিয়ে যায় যৌনা্ঙেগর দিকে।
জীবনে হাল ছাড়ারও সময় আসে। একটা সময় খুলেছিলাম জানালা। টের পেলাম, কেবলই মোহ ভেঙ্গে যায়। নতুন মোহ সৃষ্টি হয়। ছেলেরা কানাকানি করিয়া বলে- ল-কাপুড় খুইল্লা দেহি আসল ঘটনা কি?
দৃশ্য ৬.
নিজের মুখোমুখি দাঁড়ালে নিজেকে আর চেনা যায় না। কেবল হাত বদলের খেলা। কারো বুকে আর আশ্রয় হয় নি।
দূর থেকে আঙ্গুল উঠিয়ে অবহেলায় কেউ কেউ বলে- বেডাও না বেডিও না, আস্তা একখান মাগি।
কপাট বন্ধ ঘরে রাত্রির অন্ধকার নেমে আসে। বেঁচে আছি না মরে গেছি, তার কোন আলাদা অস্তিত্ব খুঁজে পাই না। নিজের কাছে নিজেকে এমন বোঝা মনে হয়, একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর জাগতেও ইচ্ছে করে না। আজকাল খুব সহজে আর ঘুমও আসে না। বড্ড একা মনে হয়। কারো চোখে দেখি না প্রেম বা স্পর্শের অনুররণ। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে প্রহসন মনে হয়।
দৃশ্য ৭.
সত্যি আজ শাড়ি চুড়ি পরে, পায়ে ঘুঙর বেঁধে দাঁড়িয়েছি আয়নায় । নিজেকে শেষবারের মতো দেখা।
চারদিকে শোনা যাচ্ছে রসালো সব কথা। মুখ বাকিয়ে ব্যঙ্গ করে হিজড়া, কতি মেয়েলি,পাপ, অস্বাভাবিক অসুস্থ,…। কত কি ! তীর্যক হাসিতে ভাসছে যেন ঘরটা। সন্তর্পণে ফেলি প্রতিটি চরণ। আজ ভুলে গেছি সব বাঁধা। চিন্তাস্তর স্বাধীন। চরণ আজ বাঁধাহীন। নিভে গেলো সব বাঁতি।
আবার মনে পরে যাচ্ছে সেই ছোট বেলার কথাগুলো। কোমল হাতে নিয়ে ছিলাম অর্ধনারীশ্বরকে।
পায়জামার ওপর ঘুঙুর বাঁধা শেষে, শুভ্র পাঞ্জাবিতে ত্রিভঙ্গে দাঁড়ায়েছিলাম, জেগে ওঠেছিল নৃত্যপর কিশোর।
দৃশ্য ৮
বদ্ধ ঘরের জানালার ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছে অপলক নির্বাক শৈশব, কৈশোর এমন কি যৌবন।
জানালার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে ঝুলে থাকা আলতায় রাঙ্গা নগ্ন দুটো পা।
একটা কন্ঠস্বর চক্রাকারে চারপাশে ঘুরে যায়। অদৃশ্য কন্ঠটি আমার চারপাশ তছনছ করে দেয় বারবার।
হুমম, মায়ের কন্ঠস্বর শোনা যায়, জন্মই অইলো গিয়া তর আজইন্মের পাপ ।
Your comparisons between different tech products are so thorough and unbiased. They\’re my go-to before any tech purchase now.
Thanks for the trust, Laura! Glad to be your go-to source.
I\’m so glad I found your site. Your posts are consistently excellent.
Your dedication to providing quality content is truly admirable. I\’m a fan of your work.
I\’m impressed by your writing style and the depth of your knowledge on this topic.