
মধ্যমায় কালো রিং। টি শার্টে হ্যান্ড পেইন্টেড এইস ফ্ল্যাগ। আর খাতায় এইস সিম্বল নিয়ে, ক্লাসে প্রবেশ করলো রিমন। এতদিন পর সে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছে। অনেক কেন,কি,কিভাবে এসবের উত্তর সব জানে সে। নিজেকে নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই৷ ক্লাসে ঢুকতেই, তার আশেপাশের বন্ধুরা তাকে নানা কিছু জিজ্ঞেস করা শুরু করলো, কেউ জিজ্ঞেস করছে, সে রিলেশনে কিংবা বাগদান করেছে কি না(রিং এর জন্য)। কেউ জিজ্ঞেস করছে, এটা আবার কোন দেশের পতাকা। সে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “ তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর একে একে দিচ্ছি। প্রথমত এই রিংটা হলো এইস রিং, যারা এইস বা এসেক্সুয়াল তারা এটা পরে। এখন প্রশ্ন হলো এইা বা এসেক্সুয়াল বিষয়টা কি? তাই তো, তাও বলছি”
“যারা কারো প্রতি সাধারণত যৌন আকর্ষণ, যৌন আকাঙ্ক্ষা, যৌন আগ্রহ অথবা এরকম কোনো প্রকার অনুভূতি অনুভব স্বল্প পরিমানে করেন কিংবা করেন না তাঁদের অযৌনচিত্ত বা এসেক্সুয়াল বলা হয়।”
আর এই যে রিং বা ফ্ল্যাগ গুলো দেখছিস তোরা, এই সব হলো সিম্বল যে আমি প্রাউড”
আরো কিছু বলতে নিয়েছিলো, ব্যঙ্গাত্মক হাসির শব্দে সে থেমে গেলো। তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকে কৌতুকভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিফাত বলে বসলো, তার মানে তুই আমাদের মতো “নরমাল” না! তুই বেসিক্যালি “আচোদা”।। বলে সবাই আবার হাসাহাসি শুরু করলো।
অপরদিক থেকে রাজু ফোঁড়ন কাটলো, “ওর মতো লুচ্চা পোলা? আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেয়ে বন্ধু ওর ,যে সারাদিন মাইয়া নিয়ে ঘুরে সে আবার এসেক্সুয়াল। এসব ডাহা মিথ্যা কথা। ওয় ইচ্ছে করে এসব করছে, এটেনশন পাওয়ার জন্য। যাতে মেয়েরা ওর প্রতি সহানুভূতি দেখাইতে দেখাইতে, প্রেমে পড়ে যায়। বুঝলি তোরা? ঐ যে বাংলা সিনেমার ডায়ালগ আছে না? আমার প্রেমের জাদুতে ওকে ঠিক করে নিবো, ওরেও মাইয়া ঠিক কইরা নিবো।
সব ধান্ধাবাজি!“
“Life isn’t about waiting for the storm to pass; it’s about learning to dance in the rain and finding joy in the midst of life’s challenges.”
Vivian Greene
মনটা খারাপ হয়ে যায় রিমনের৷ ভেবেছিলো ওর বন্ধুগুলা ওকে সাহায্য করবে, বুঝতে পারবে ওকে। কিন্তু উল্টো মজা নিচ্ছে পুরোটা না বুঝেই। পুরো ক্লাসে একা হয়ে গেলো। এমনিতে মিশুক ও সরল মনের ছেলে সে। সবসময় সবার উপকার করার চেষ্টা করে। কোথাও কেউ বুলিং এর শিকার হলে সে-ই বাঁচায়। কিন্তু আজ তাকে বাঁচাবে কে? এসব নিয়ে আর ভাবলো না। কিন্তু, আজকের ঐ ঘটনার পর সবাই ওকে হালকা এড়িয়েই চলে। যেন ছোঁয়া লাগলেই পাপী হয়ে যাবে। ক্লাসে কানাঘুষা চলতে চলতে তা মেয়েদের কানেও গেলো। সে নিজেই ওর ফ্রেন্ডদের বলতো কিন্তু ওসবের পর আর মুড হয় নি।
“কিরে, কয়টাকা দিয়ে দেশ কিনলি রে? সে-ই পতাকা বানিয়েছিস মাইরি!!”
কথাগুলো শুনে, সামনে তাকিয়ে দেখলো রিয়া তাকিয়ে আছে। আর এক্সপ্লেইন করার ধৈর্য্য নাই, তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে, চুপ করে রইলো। রিয়া বললো, “রিয়াদের কাছ থেকে সব শুনেছি আমি। তুই এগুলা নিয়ে হুদাই মাতামাতি করছিস। তোর বয়সই বা কত হলো, সামনে বিয়া সাদি করে যখন লাল টুকটুকে নতুন বউকে দেখবা,এসব জ্বীন-ভূত সব ভাগবে! বুঝলি!
চাপ নিস না। চল ফুচকা খেতে যাই”
সে আর কিছু বললো না।
ফুচকা খাওয়ার দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করে, রাজু, ক্লাসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দিয়ে লিখলো। ‘সবাই দেখো আমাদের গর্বিত “বাড়াহীন” ভায়া, কিভাবে মেয়ে পটাচ্ছে!!”
ছবিতে ইডিট করে দু লাইনের ছন্দ বসিয়ে দিযেছে।
“যার নাই ধোন
সে কেমনে পাবে মেয়ের মন?”
রিমনের এসব দেখে মনে হতে থাকে, পৃথিবীর মাটি যদি দুভাগ হয়ে যেতো, সেও সীতার মতো পাতালে চলে যেতো। ঐদিন, আর ক্লাস করতে পারে নি। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে সে চলে এসেছে বাসায়।
কিন্তু, এইসব বুলিং প্রায় প্রতিদিন ই চলতে লাগলো। কয়েকজন বুলি করে, আর বাকিরা এসব দেখে তামাশা নেয়৷ কেউ প্রতিবাদ বা তার পক্ষে কথা বলার সাহস পায় না, পাছে নিজেরাও ফুটেজ খেয়ে ফেলে,এই ভয়ে।
সে খুবই স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ, ক্রমাগত চেষ্টা করছিলো শক্ত থাকবার।
স্কুল থেকে, বার্ষিক ট্যুরে নিয়ে গেলো কক্সবাজার। সেখানে ২দিন ৩রাত থাকবে ওরা। সে-ও গেলো অনেকের সাথে। সে জানতেও পারলো না ওকে নিয়ে বাকিরা কি জঘন্য প্ল্যান করে বসে আছে। কক্সবাজারে পৌঁছে সবাই রাতের ডিনার শেষে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে। কাল সকাল সকাল যেতে হবে সূর্যোদয় দেখার জন্য। সে-ও নিজের রুমে শুয়ে পড়ার জন্য চললো। তার রুমে ওমন কেউ নেই যে বুলি করবে, এই ভেবে সে একটু নিশ্চিন্তেই করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো। ওমন সময়, চারজন পিছন থেকে এসে, ওকে পাঁজা কোলা করে ধরে নিয়ে গেলো অন্যরুমে। মুখে রুমাল গুঁজে দিয়েছে যেন সে চিৎকার না করতে পারে।
রুমে নিয়ে, ওর পুরো শরীরের জামা কাপড় খুলে, বেঁধে রাখলো। রিমন দেখলো রাজু, রিফাতের সাথে অন্য সেকশনের ২ছেলেও আছে। রিফাত বললো, আচোদা মালটারে এখন আমরা চোদন খাওয়াবো।
রাজু বললো, “তোমার সাধুগিরি ছোটাবো আজ। পর্ণ ভিডিও ছেড়ে দিবো এখন, দেখবো তোমার ধোন খাড়ায় নাকি না!! তারপর এটা রেকর্ড করে ক্লাসে সবাইকে দেখাবো।”
বাকিরা অশ্লীল ভঙ্গিতে হেসে উঠলো। আতঙ্কে, লজ্জায় রিমনের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে,কিন্তু সে কিচ্ছু করতে পারছে না। হাত পা এত শক্ত করে বাঁধা যে জায়গায় জায়গায় চেপে বসে এখন ব্যথা করছে।
অন্য সেকশনের একজন বলে উঠলো, “আহারে!! বাবু কাঁদে না, কাঁদে না!”
একটা সময়, তারা সত্যি ই তার সামনে একটি মেয়ের উলঙ্গ নৃত্যের ভিডিও ছেড়ে দিলো।
ততক্ষণে, ওর রুমে যারা ছিলো তারা স্যারদের কাছে কমপ্লেইন করে ফেলেছে যে রিমন তো রুমে আসে নি। তারপর সবাই মিলে খুঁজাখুঁজি চলছিলো। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, স্যাররা তাদের রুমে নক করেন এবং এসে উদ্ধার করেন তাকে। ওদের চারজনের গার্ডিয়ান কল করা হয়। তবে পুরো কাহিনী শুনে, স্যার ম্যামরা রিমনকেও ভৎসনা করেন। তারা তার পরিবারকে ডেকে,রিমনের নামে কমপ্লেইন করেন যে সে তাদের ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সাথে “খারাপ” বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে৷ যা নৈতিকতার বিরোধী। এই ঘটনার ফলে বেশ বড় ধরণের প্রভাব পড়ে রিমনের মনে। রিমন আগের মতো হাস্যোজ্জ্বল নেই। কারো সাথে মিশেও না,বলা চলে মিশতে পারেও না। ট্যুরের আগে অন্যরা তার সাথে মোটামুটি মিশলেও এখন একদম কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তার মনে হয়, সে যেন বড় কোনো অপরাধ করেছে। এরজন্য স্কুল চাইলে তাকে বের করে দিলেও পারতো! অন্তত এগুলো থেকে সে মুক্তি পেতো।
Your dedication to providing quality content is truly admirable. I\’m a fan of your work.
I\’m glad you enjoyed it! Your kind words inspire me to keep creating informative content.
I\’m impressed by your writing style and the depth of your knowledge on this topic.